Ticker

6/recent/ticker-posts

প্রশ্ন উত্তর || অর্জুনের লক্ষ্যভেদ | কাশীরাম দাস || বাংলা | দ্বিতীয় ভাষা | সাহিত্য সম্ভার | দশম শ্রেণী

'অর্জুনের লক্ষ্যভেদ' কবিতাটি কাশীরাম দাস রচিত 'ভারত-পাঁচালী' থেকে নেওয়া হয়েছে। কবি এর নামকরণ করেছিলেন  'ভারত-পাঁচালী ' কিন্তু  'কাশীদাসী মহাভারত' নামেই এইটি জনপ্রিয়।

কবি:

কাশীরাম দাস




দ্বিজ-সভা-মধ্যেতে বসিয়া যুধিষ্ঠির। 
চতুর্দিকে বেষ্টি বসিয়াছে চারি বীর।। 

আর যত বসিয়াছে ব্ৰাহ্মণমণ্ডল। 
দেবগণ মধ্যে যেন শোভে আখণ্ডল ৷৷ 

নিকটেতে ধৃষ্টদ্যুম্ন পুনঃপুনঃ ডাকে ৷ 
লক্ষ্য আসি বিন্ধহ যাহার শক্তি থাকে।। 

যে লক্ষ্য বিন্ধিবে কন্যা লভে সেই বীর। 
শুনি ধনঞ্জয় চিত্তে হইলা অস্থির।। 

বিন্ধিব বলিয়া লক্ষ্য করি হেন মনে। 
যুধিষ্ঠির পানেতে চাহেন অনুক্ষণে।। 

অর্জুনের চিত্ত বুঝি কহেন ইঙ্গিতে। 
আজ্ঞা পেয়ে ধনঞ্জয় উঠেন ত্বরিতে।। 

অর্জুন চলিয়া যান ধনুকের ভিতে।
দেখিয়া সে দ্বিজগণ লাগে জিজ্ঞাসিতে।। 

কোথাকারে যাহ দ্বিজ কীসের কারণ। 
সভা হৈতে উঠি যাহ কোন প্রয়োজন।। 

অর্জুন বলেন যাই লক্ষ্য বিন্ধিবারে। 
প্রসন্ন হইয়া সবে আজ্ঞা দেহ মোরে।। 

শুনিয়া হাসিল যত ব্রাহ্মণমণ্ডল। 
কন্যারে দেখিয়া দ্বিজ হইল পাগল।। 

যে ধনুকে পরাজয় পায় রাজগণ। 
জরাসন্ধ শল্য দ্রোণ কর্ণ দুর্যোধন।। 

সে লক্ষ্য বিন্ধিতে দ্বিজ চাহে কোন লাজে। 
ব্রাহ্মণেতে হাসাইল ক্ষত্রিয়-সমাজে।। 

বলিবেক ক্ষত্র যত লোভী দ্বিজগণ । 
হেন বিপরীত আশা করে সে কারণ।।

বহুদূর হৈতে আসিয়াছে দ্বিজগণ। 
বহু আশা করিয়াছে পাবে বহু ধন।। 

সে সব হইবে নষ্ট তোমার কর্ম্মেতে। 
অসম্ভব আশা কেন কর দ্বিজ ইথে।। 

অনর্থ না কর, বৈস আসিয়া ব্রাম্ভণ। 
এত বলি ধরি বসাইল দ্বিজগণ।। 

পুনঃ পুনঃ ডাকি বলে দ্রুপদ তনয়। 
শুনিয়া অধৈয্য চিত্ত বীর ধনঞ্জয়।। 

পুনঃ উঠিবারে পার্থ করিলেন গতি। 
হেনকালে শঙ্খনাদ করেন শ্রীপতি।। 

পাঞ্চজন্য শঙ্খনাদ ত্রিলোক পূরিল। 
দুষ্ট রাজগণ শব্দ শুনি স্তব্ধ হৈল।। 

শঙ্খশব্দ শুনি পার্থ হয়েন উল্লাস। 
ভয়াতুর জনে যেন পাইল আশ্বাস।। 

উঠ উঠ ধনঞ্জয় ডাকে শঙ্খবর। 
লক্ষ্য বিন্ধি দ্রৌপদীরে লভহ সত্বর।। 

গোবিন্দের ইঙ্গিতে উঠিলেন অর্জ্জুন। 
পুনঃ গিয়া ধরে তারে যত দ্বিজগণ।। 

দ্বিজগণ বলে দ্বিজ হইলে বাতুল। 
তব কর্ম্ম দেখি মজিবেক দ্বিজকুল।। 

দেখিলে হাসিবে যত দুষ্ট ক্ষত্রগণ। 
বলিবেক লোভী এই সব দ্বিজগণ।।

সবা হৈতে সবাকারে দিবে খেদাইয়া।
পাবার থাকুক কার্য্য লইবে কাড়িয়া।।

এত বলি ধরাধরি করি বসাইল।
দেখি ধর্ম্মপুত্র দ্বিজগণেরে কহিল।।

কি কারণে দ্বিজগণ কর নিবারণ।
যার যত পরাক্রমে সে জানে আপন।।

যে লক্ষ্য বিন্ধিতে ভঙ্গ দিল রাজগণ।
শক্তি না থাকিলে তখা যাবে কোন্ জন।।

বিন্ধিতে না পারিলে আপনি পাবে লাজ।
তবে নিবারণে আমা সবার কি কাজ।।

যুধিষ্ঠির-বাক্য শুনি ছাড়ি দিল সবে।
ধনুর নিকটে যান ধনঞ্জয় তবে।।

হাসিয়া ক্ষত্রিয় যত করে উপহাস।
অসম্ভব কর্ম্মে দেখি দ্বিজের প্রয়াস।।

সভা-মধ্যে ব্রাহ্মণের মুখে নাই লাজ।
যাহে পরাজয় হৈল রাজার সমাজ।।

সুরাসুর-জয়ী যেই বিপুল ধনুক।
তাহে লক্ষ্য বিন্ধিবারে চলিল ভিক্ষুক।।

কন্যা দেখি দ্বিজ কিবা হইল অজ্ঞান।
বাতুল হইল কিবা করি অনুমান।।

কিম্বা মনে করিয়াছে দেখি একবার।
পারিলে পারিব, নহে কি হবে আমার।।

নিলর্জ্জ ব্রাহ্মণে মোরা অল্প না ছাড়িব।
উচিত যে শাস্তি হয়, অবশ্য তা দিব।।

কেহ বলে ব্রাহ্মণেরে না বল এমন।
সামান্য মনুষ্য বুঝি না হবে এ জন।।

কাশীরাম দাস


কাশীরাম দাস, কাশীদাস বা কাশীরাম দেব মধ্যযুগীয় (সময়কাল আনুমানিক ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দী) বাঙালি কবি। তিনি সংস্কৃত মহাকাব্য মহাভারত বাংলা পদ্যে অনুবাদ করেছিলেন। তার অনূদিত গ্রন্থ ভারত-পাঁচালী বা কাশীদাসী মহাভারত নামে পরিচিত। তার অনূদিত মহাভারতই বাংলা ভাষায় সবচেয়ে জনপ্রিয়।

 
কবি কাশীরাম দাস বর্ধমান জেলার ইন্দ্রাণী পরগণার (অধুনা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা) অন্তর্গত সিঙ্গি (মতান্তরে সিদ্ধি) গ্রামে এক বৈষ্ণব কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
এ গ্রাম এখনও আছে এবং এই গ্রামে কাশীরামের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলি আজও বর্তমান। তাঁরা দেব উপাধিধারী কায়স্থ। তাঁর পিতার নাম ছিল কমলাকান্ত। কবিরা ছিলেন তিন ভাই—কৃষ্ণরাম, কাশীরাম ও গদাধর। তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন কবি।



কাশীদাসী মহাভারতের প্রচ্ছদ
কাশীদাসী মহাভারতের প্রচ্ছদ

• টীকা ( Note):

> দ্বিজ (সংস্কৃত: द्विज) : অর্থ "দুই জন্ম"- প্রথম জন্ম শারীরিক, অন্য জন্ম আধ্যাত্মিক। উত্তরণের আচারের মাধ্যমে মানুষ আধ্যাত্মিকভাবে জন্মগ্রহণ করে। হিন্দু সমাজ ব্যবস্থায় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এই তিন বর্ণের সদস্যদের উপনয়ন দীক্ষার সংস্করকে দ্বিতীয় বা আধ্যাত্মিক জন্ম বলে।
> যুধিষ্ঠির : পঞ্চ পাণ্ডব ভাইদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতে তাঁর কথা উল্লেখিত হয়েছে। তাঁর পিতামাতা হলেন কুরু রাজবংশের রাজা পান্ডু এবং কুন্তী।
> বেষ্টী : বেষ্টন করে। [বেষ্টন অর্থ - [বিশেষ্য Noun পদ] ঘেরা, ঘেরাও, প্রদক্ষিণ, প্রাচীর, বেড়া, পরিধি। Surrounding ;]
> আখণ্ডল [ ākhaņḍala আখন্‌ডল্‌] : [বিশেষ্য Noun পদ] ইন্দ্র। ‍যিনি বজ্র দ্বারা পর্বত ভেঙে ফেলেন; [আ + √ খণ্ডি + অল]।
> ধৃষ্টদ্যুম্ন : পাঞ্চাল রাজ্যের রাজা দ্রুপদ-এর পুত্র। দ্রৌপদীর যমজ ভাই। দ্রোণকে হত্যা করেছিলেন।
> ধনঞ্জয় :  অর্জুন। পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম। 'অর্জুন' শব্দের অর্থ 'উজ্জ্বল', 'জাজ্বল্যমান', 'সাদা' অথবা 'রূপালি'। তিনি একজন অব্যর্থ ধনুর্বিদ। তাকে 'পার্থ' নামেও ডাকা হয়।
> প্রসন্ন [ adjective ] ; সদয়। সন্তুষ্ট। Pleased ; favorable ; kind ;
> জরাসন্ধ : জরাসন্ধ (সংস্কৃত: जरासन्ध) ছিলেন মগধের রাজা। মহাকাব্য মহাভারত অনুযায়ী তিনি ছিলেন বৃহদ্রথ রাজবংশধর। তার পিতা বৃহদ্রথ এই রাজবংশের  প্রতিষ্ঠাতা। জরাসন্ধ শব্দটি দুইটি সংস্কৃত শব্দের সন্ধিতে গঠিত। শব্দ দুইটি হলো জরা ও সন্ধ। সন্ধ অর্থ হলো যুক্ত করা। জরা নামক এক রাক্ষসী জরাসন্ধের দুইটি অর্ধাংশ জুড়ে পুর্ণ মানবাকৃতি দিয়েছিলো। তাই তার নাম জরাসন্ধ।
> শল্য : মদ্রদেশের রাজা। বীর যোদ্ধা। মাদ্রীর ভাই। মাদ্রীর সাথে হস্তিনাপুরের রাজা পাণ্ডুর বিয়ে হয়েছিল। 
> দ্রোণ (সংস্কৃত: द्रोण), এছাড়াও দ্রোণাচার্য (সংস্কৃত: द्रोणाचार्य) : কৌরব এবং পাণ্ডবদের রাজ অস্ত্রগুরু। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পঞ্চদশ দিনে, তিনি যখন যুদ্ধক্ষেত্রে সমাধিমগ্ন ছিলেন তখন পাণ্ডব সেনাপতি ধৃষ্টদ্যুম্ন, তাঁকে বধ করেন।
> কর্ণ : সূর্যদেব ও কুন্তীর সন্তান। সেই সূত্রে পাণ্ডবদের বড় ভাই। তিনি কৌরব রাজকুমার দুর্যোধনের ঘনিষ্ঠতম মিত্রে পরিণত হন এবং ফলশ্রুতিতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তিনি কৌরবদের পক্ষে নিজ ভাই পাণ্ডবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
> দুর্যোধন : দূর্যোধন হলেন মহাভারতের একটি চরিত্র। তিনি কৌরব পক্ষের যুবরাজ ছিলেন। তার পিতার নাম ধৃতরাষ্ট্র এবং মাতার নাম গান্ধারী। তিনি ধৃতরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং দুঃশাসনের বড় ভাই।
> ইথে [ অব্যয় পদ / adverb ] : ইহাতে। About this ; in this.
> শ্রীপতি : শ্রীনিবাস, শ্রীপতি, বিষ্ণু, কৃষ্ণ। কৃষ্ণ বা শ্রীকৃষ্ণ (সংস্কৃত: श्रीकृष्ण) হলেন সনাতন হিন্দুধর্মে পরম পুরুষোত্তম ভগবান। পুরাণ অনুযায়ী তিনি ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার।
> পাঞ্চজন্য (সংস্কৃত: पाञ्चजन्य, Pāñcajanya) : দেবতা বিষ্ণুর শঙ্খ। 
> বাতুল [ adjective / বিশেষণ ] : পাগল, উন্মাদ। 
> মজিবেক : মজিয়া যাওয়া। বিভ্রান্ত হওয়া। Be absorbed in ; lose oneself; 



>> "অর্জুনের লক্ষ্যভেদ" কবিতার প্রশ্ন - উত্তর <<

ক) "যুধিষ্ঠির-বাক্য শুনি ছাড়ি দিল সবে। / ধনুর নিকটে যান ধনঞ্জয় তবে।।"-- যুধিষ্ঠির কে? ধনঞ্জয় কে?  যুধিষ্ঠির সবার উদ্দ্যেশ্যে কী বলেছিল? [1+1+3]
উত্তর: প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতে লেখা আছে পঞ্চ পাণ্ডব ভাইদের মধ্যে বড় হলেন যুধিষ্ঠির। তাঁর পিতামাতা হলেন কুরু রাজবংশের রাজা পান্ডু এবং কুন্তী।

         অর্জুনের আরেক নাম ধনঞ্জয়। পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম। তিনি একজন অব্যর্থ ধনুর্বিদ। তাকে 'পার্থ' নামেও ডাকা হয়।

          দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় অর্জুন ধনুক দিয়ে মাছের চোখে লক্ষ্যভেদ করতে যাচ্ছিল। তখন সভায় উপস্থিত দ্বিজসকল তাকে ঠাট্টা করে তাকে বাধা দিচ্ছিল। তখন যুধিষ্ঠির সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলেছিল যে দ্বিজসকল যেন অর্জুনকে বাধা না দেয়। কারণ যে লক্ষ্যভেদ রাজারাও কর‍তে পারেনি সেখানে লক্ষ্যভেদ করার ক্ষমতা অর্জুনের আছে বলেই হয়তো যাচ্ছে। যদি লক্ষ্যভেদ করতে না পারে সে নিজেই লজ্জা পাবে। সুতরাং তাকে বাধা দেওয়া উচিৎ নয়। এই কথা শুনে সকলে থেমে গিয়েছিল।

খ) "কন্যা দেখি দ্বিজ কিবা হইল অজ্ঞান।/ বাতুল হইল কিম্বা করি অনুমান।"-- এই কথা কারা বলেছিল এবং কার উদ্দ্যেশ্যে বলেছিল? সেই দ্বিজ বাতুল হয়েছিল বলে কেন অনুমান করা হয়েছিল? (1+4)
উত্তর: দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় উপস্থিত ক্ষত্রিয়গণ অর্জুনকে এই কথাগুলো বলে ঠাট্টাতামাসা করেছিল।

        ধ্রুপদ রাজার কন্যা দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় দ্রৌপদীকে পেতে হলে ধনুক দিয়ে মাছের চোখে লক্ষ্য ভেদ করার পরীক্ষা ছিল। জলের পাত্রে মাছের ছায়া দেখে বিরাট ধনুক দিয়ে সেই মাছের চোখে তীর বিদ্ধ করা খুবই কঠিন ছিল। দ্রোণ, কর্ণ, দুর্যোধনের মত ক্ষত্রিয় রাজারা সেই ধনুক দিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। এইরকম একটা অসম্ভব কাজ করতে অর্জুন যখন চেষ্টা করতে যাচ্ছিল তখন স্বয়ম্বর সভায় উপস্থিত সকল ক্ষত্রিয়রা উপহাস করেছিল। তারা ঠাট্টা করে বলেছিল হয়তো  ব্রাহ্মণ ভিক্ষুক অর্জুন দ্রৌপদীর রূপ দেখে দিশেহারা হয়ে গিয়েছে অথবা পাগল হয়ে গিয়েছে। যে পরীক্ষায় সকলে ব্যার্থ হয়েছে পাগল না হলে সেখানে কেউ যোগ দিতে যায় না।


গ) "নিকটেতে ধৃষ্টদ্যুম্ন পুনঃপুনঃ ডাকে।" -- ধৃষ্টদ্যুম্ন বারবার ডেকে কী বলছিল?[1]
উত্তর: ধ্রুপদ রাজের কন্যা দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় দ্রৌপদীকে পেতে হলে ধনুক দিয়ে মাছের চোখে লক্ষ্য ভেদ করার পরীক্ষা ছিল। সেই সভায় ধ্রুপদ রাজার পুত্র ধৃষ্টদ্যুম্ন সভার সকলকে বারবার ডেকে বলেছিল যে বীরের শক্তি আছে সে লক্ষ্যভেদ করুক। তাহলে সে দ্রৌপদীকে লাভ করতে পারবে।

ঘ) "কন্যা দেখি দ্বিজ কিবা হইল অজ্ঞান।/ বাতুল হইল কিম্বা করি অনুমান।"-- 'দ্বিজ' ও 'বাতুল' শব্দের অর্থ কী? 'কন্যা' ও 'দ্বিজ' বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? কার বাতুল হওয়ার কথা বলা হয়েছে? (1+1+1)
উত্তর:  'দ্বিজ' শব্দের অর্থ যে দুইবার জন্ম গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ ব্রাহ্মণ। 'বাতুল' শব্দের মানে হল উন্মাদ বা পাগল । 

           এখানে 'কন্যা' বলতে ধ্রুপদ রাজার কন্যা দ্রৌপদীকে বোঝানো হয়েছে। আর 'দ্বিজ' বলতে অর্জুনকে বোঝানো হয়েছে।

           দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় লক্ষ্যভেদ করতে উপস্থিত অর্জুনকে অন্যান্য দ্বিজগণ বাতুল বা পাগল ভেবেছিল।



ঙ) "যুধিষ্ঠির-বাক্য শুনি ছাড়ি দিল সবে। / ধনুর নিকটে যান ধনঞ্জয় তবে।।"-- যুধিষ্ঠিরের কোন কথা শুনে সকলে ছেড়ে দিল? [1] [MP 2023]
উ: ব্রাহ্মণেরা যখন অর্জুনকে লক্ষ্যভেদ করতে বাধা দিচ্ছিল সেই সময় যুধিষ্ঠির সভায় উপস্থিত সকলকে বললেন যে প্রত্যেকেই নিজের ক্ষমতা জানে। অর্জুনও নিজের ক্ষমতা জানে। যে লক্ষ্যভেদে ক্ষত্রিয় রাজারা হাল ছেড়ে দিয়েছিল শক্তি না থাকলে অর্জুন সেখানে যাবেই বা কেন! আর যদি লক্ষ্যভেদ করতে না-ও পারে তবে সে নিজেই লজ্জা পাবে। সুতরাং তাকে আমাদের বাধা দেওয়া উচিৎ নয়। 


চ) "নির্লজ্জ ব্রাহ্মণে মোরা অল্পে না ছাড়িব।' – কাকে 'নির্লজ্জ ব্রাহ্মণ' বলা হয়েছে? কেন তাঁকে নির্লজ্জ ব্রাক্ষ্মণ বলা হল? (১+২) [MP 2023]
উ:  এখানে দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় লক্ষ্যভেদ করতে যাওয়া অর্জুনকে নির্লজ্জ ব্রাহ্মণ বলা হয়েছে। 
দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় উপস্থিত ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়রা অর্জুনকে লক্ষ্যভেদ করতে বারে বারে বাধা দিয়েছিল। তারা উপহাস করেছিল যে, যে ধনুক দিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি বড় বড় যোদ্ধা ও রাজারা, অর্জুনের মত ব্রাহ্মণ কী করে সেই ধনুক দিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে যায়। কিন্তু যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞা পেয়ে অর্জুন সভায় উপস্থিত সকলের বাধা অতিক্রম করে লক্ষ্যভেদ করতে উদ্যত হয়। তখন সবাই মনে করেছিল যে অর্জুন পাগল হয়েছে। অথবা তার হেরে যাওয়ার লজ্জা নেই তাই শুধু একবার লক্ষ্যভেদ করার চেষ্টা করতে চায়। 


ছ) "আজ্ঞা পেয়ে ধনঞ্জয় উঠেন ত্বরিতে।'- 'ধনঞ্জয়' কী আজ্ঞা পেলেন? [1] [MP 2022]
উ: ধৃষ্টদ্যুম্ন যখন দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় লক্ষ্যভেদ করতে উপস্থিত সকলকে আহ্বান করেছিল তখন অর্জুন অস্থির হলেন। তিনিও লক্ষ্যভেদ করবেন বলে মনস্থির করলেন। এবং অনুমতির জন্য বারবার যুধিষ্ঠিরের দিকে তাকাচ্ছিলেন। অর্জুনের মনের কথা বুঝে যুধিষ্ঠির তাকে ইশারায় লক্ষ্যভেদ করার অনুমতি দিলে অর্জুন ধনুকের দিকে এগিয়ে গেলেন।