“
জগত কোকিলের মধুর কুহু গানে মাতোয়ারা। অথচ কাকের গলার কর্কশ শব্দ বিষ মনে হয়। মানুষ আদর যত্ন দিয়ে শুক ও শারী পোষে কিন্তু কাক পোষে না। অর্থাৎ গুণের কদর সর্বত্র। আর নির্গুণের কোনও কদর নাই।
”
Education Desk:
Haldibari 24 Ghonta

মহৎ যে হয় তার, সাধু ব্যবহার।
উপকার বিনা নাহি জানে অপকার॥
দেখহ কুঠার করে, চন্দন ছেদন।
চন্দন সুবাস তারে, করে বিতরণ॥
কাক কারো করে নাই, সম্পদ হরণ।
কোকিল করেনি কারে, ধন বিতরণ॥
কাকের কঠোর রব, বিষ লাগে কাণে।
কোকিল অখিলপ্রিয়, সুমধুর গানে॥
গুণময় হইলেই, মান সব ঠাঁই।
গুণহীনে সমাদর, কোন খানে নাই॥
শারী আর শুক পাথী, অনেকেই রাখে।
যত্ন কোরে কে কোথায়, কাক পুষে থাকে?
অধমে রতন পেলে, কি হইবে ফল?
উপদেশে কখন কি, সাধু হয় খল?
ভাল, মন্দ, দোষ, গুণ, আধারেতে ধরে।
ভুজঙ্গ অমৃত খেয়ে, গরল উগরে॥
লবণ-জলধি-জল করিয়া ভক্ষণ।
জলধর করিতেছে, সুধা বরিষণ॥
সুজনে সুযশ গায়, কুযশ ঢাকিয়া।
কুজনে কুরব করে সুরব নাশিয়া॥
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (১৮১২-১৮৫৯) : ২৪ পরগনার কাঞ্চনপল্লি (কাঁচড়াপাড়া) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হরিনারায়ণ গুপ্ত এবং মাতা শ্রীমতী দেবী। তিনি বাংলা ভাষার প্রথম দৈনিক পত্রের সম্পাদক। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে ২৮ জানুয়ারি তাঁর সম্পাদনায় ‘সংবাদ প্রভাকর' প্রকাশিত হয়। তাঁর লেখা কয়েকটি গ্রন্থের নাম কবিবর রামপ্রসাদ সেনের কালীকীর্তন, প্রবোধ প্রভাকর, বোধেন্দু বিকাশ প্রভৃতি। সমকালের বিষয় বা ঘটনাকে অবলম্বন করে ক্ষুদ্র ব্যঙ্গ কবিতা লিখেছেন।
>> টীকা (note) : <<
> যশ : খ্যাতি, glory, [ বিশেষ্য ]
> সু : ভালো, good,
> জলধি : সাগর, সমুদ্র, sea,
> জলধর : মেঘ, cloud, সমুদ্র, ocean,
> রতন : রত্ন, দামী পাথর, zem, jewel,
> ছেদন : কাটা, cut,
> ঠাঁই : স্থান, যায়গা, place, space,
>> "খল ও নিন্দুক" কবিতার প্রশ্ন উত্তর: <<
ক) "যত্ন কোরে কে কোথায়, কাক পুষে থাকে?"-- কাক কেউ পোষে না কেন? [1]
উত্তর: এই পৃথিবীর সর্বত্রই গুণের কদর করা হয়। শুক-শারি, তোতা-ময়না, কোকিলের সুমিষ্ট স্বরের জন্য তাদের সকলেই পুষতে চায়। কাক আমাদের সম্পদ লুঠ করেনি ঠিকই। কিন্তু তার গুণ নেই। কাকের কর্কশ কণ্ঠের জন্য কেউ তাকে পোষে না।
খ) "গুণময় হইলেই, মান সব ঠাঁই। / গুণহীনে সমাদর, কোন খানে নাই॥" -- কবি কোন্ কোন্ উপমার (simile) সাহায্যে উপরে লিখিত প্রসঙ্গটি (context) ব্যাখ্যা করেছেন? [3]
উত্তর: গুণ (quality) থাকলে সবাই সম্মান করে; খাতির করে। যার গুণ নেই তাকে কেউ সমাদর (respect) করে না; খাতির করে না।
কবি বলেছেন কাক কারও সম্পদ কেড়ে নেয়নি। কোকিল কাউকে ধন সম্পদ দান করেনি। কিন্তু জগতের মানুষ কোকিলের মধুর কুহু গানে মাতোয়ারা। অন্যদিকে কাকের গলার কর্কশ শব্দ বিষ মনে হয়। মানুষ আদর যত্ন দিয়ে শুক ও শারী পাখি পোষে, কিন্তু কাক পোষে না। অর্থাৎ গুণের কদর (appreciation) সর্বত্র। আর নির্গুণের কোনও কদর নাই।
গ) "লবণ-জলধি-জল করিয়া ভক্ষণ। / জলধর করিতেছে, সুধা বরিষণ॥"-- এই উপমার অর্থ কী? কবি এই উপমা দিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছেন? [2]
উত্তর: সমুদ্রের নোনাজল বাষ্প হয়ে উপরে উঠে গিয়ে মেঘ হয়। সেই মেঘ একসময় পৃথিবীর উপর বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে। সেই বৃষ্টি মিষ্টি জলের। লবণাক্ত হয় না।
কবি বোঝাতে চেয়েছেন গুণী ব্যক্তিরাও ঠিক এমন। তারা কারো নিন্দা করে না। তারা কোনো মানুষের অসুন্দর দিকগুলো প্রকাশ করে না, বরং তাদের গুণগুলো প্রকাশ করে।
ঘ) "দেখহ কুঠার করে, চন্দন ছেদন।/ চন্দন সুবাস তারে করে বিতরণ।"-- 'কুঠার' ও 'সুবাস' শব্দের অর্থ কী? উপরিক্ত কবিতার অংশটির অন্তর্নিহিত অর্থ লেখ। [1+2]
উত্তর: 'কুঠার' শব্দটির অর্থ কুড়াল। 'সুবাস' কথাটির কথাটির অর্থ বা মানে সুগন্ধ।
চন্দন গাছ তার সুগন্ধির জন্য বিখ্যাত। কুড়ুল দিয়ে আঘাত করলেই চন্দন গাছ থেকে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। কবি বলতে চেয়েছেন যে মহৎ ব্যক্তিরা এমনই হন। তাদের স্বভাবই হল উপকার করা। উপকার ছাড়া তারা অপকার করে না। আঘাত করলেও তারা চন্দন গাছের মতই তাদের গুণের সুগন্ধ ছড়িয়ে দেয়।
ঙ) "গুণময় হইলেই, মান সব ঠাঁই। গুণহীনে সমাদর, কোনোখানে নাই।"-- কোন কবির লেখা কোন কবিতার অংশ? 'ঠাঁই' শব্দের অর্থ কী? [1+1]
উত্তর: কবিতার এই পঙক্তিটি কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের লেখা 'খল ও নিন্দুক' কবিতার অংশ।
'ঠাঁই' শব্দটির অর্থ স্থান। অর্থাৎ গুণী মানুষের সম্মান সব যায়গায়।
চ) "মহৎ যে হয় তার, সাধু ব্যবহার। / উপকার বিনা নাহি জানে অপকার॥"-- মহৎ ব্যক্তিরা কেমন হয়?[1]
উত্তর: মহৎ বা গুণী ব্যক্তিরা সর্বদাই সুন্দর ব্যবহার করেন। তারা সবসময় উপকার করার চেষ্টা করেন। ক্ষতি করার কথা তারা ভাবতে পারেন না।
ছ) "ভুজঙ্গ অমৃত খেয়ে গরল উগরে।"-- "ভুজঙ্গ" কী? কাব্যের এই অংশটুকুর অর্থ কী? [1]
অথবা,
"খল ও নিন্দুক" কবিতা অনুসারে ভুজঙ্গ কী আচরণ করে থাকে? [WBBSE-MP-2024]
>> উত্তর: "ভুজঙ্গ" শব্দের অর্থ হল সাপ বা সর্প।
কবি এই উক্তির মধ্য দিয়ে বলতে চেয়েছেন যে সাপকে অমৃত খেতে দিলেও তার বিষ কমে যায় না। তেমনই খল বা খারাপ মানুষেদের হাজার উপদেশ দিলেও তারা সাধু হবে না। ভাল, মন্দ, দোষ, গুণ আসলে অন্তরের ভেতরের বিষয়। গুণী ব্যক্তিরা তাদের অন্তর থেকেই উপকারী হয়। প্ররোচনা (provoke) দিলেও তারা খারাপ হয় না।
জ) • প্রশ্ন: "লবণ-জলধি-জল করিয়া ভক্ষণ।/ জলধর করিতেছে, সুধা বরিষণ।।"--- এই উপমার মধ্য দিয়ে কবি যেভাবে মহৎ মানুষ ও খল মানুষের চরিত্র বর্ণনা করেছেন তা কবিতা অবলম্বন করে লেখ। (3) (90 words)
> উত্তর: সমুদ্রের নোনা জল বাষ্প হয়ে উঠে গিয়ে মেঘ হয়। সেই মেঘ একসময় পৃথিবীর উপর অমৃতের ধারার মতো বর্ষিত হয়। সেই বৃষ্টির জল মিষ্টি হয়, লবণাক্ত হয় না। 'খল ও নিন্দুক' কবিতায় কবি এই উপমার মধ্য দিয়ে কবি বলতে চেয়েছেন যে মহৎ ব্যক্তিরাও ঠিক এমন। মহৎ মানুষেরা সুন্দর মনের অধিকারী হয়। তারা উপকার ছাড়া ক্ষতি করতে জানে না। ভালো-মন্দ-দোষ-গুণ সবই আসলে অন্তরের বিষয়। গুণী ব্যক্তিরা তাদের অন্তর থেকেই উপকারী হয়। হাজার প্ররোচনাতেও তারা কারো ক্ষতি করে না। অপরদিকে সাপকে যেমন অমৃত খেতে দিলেও তার বিষ কমে না, তেমনই খল বা খারাপ মানুষদের হাজার উপদেশ দিলেও তারা সাধু হয়ে যায় না। নিন্দুকেরা সর্বদা মানুষের ভালো গুণাবলীগুলোব চেপে দিয়ে খারাপ দিকগুলোকেই তুলে ধরে। গুণী মানুষের ঠিক এর উলটো। তারা মানুষের অসুন্দর দিকগুলো প্রকাশ করে না বরং গুণগুলোকে প্রকাশ করে। মহৎ ব্যক্তিদের আঘাত করলেও তারা চন্দন গাছের মতই তাদের গুণের সুগন্ধ ছড়িয়ে দেয় সর্বত্র।