“
কাকলি বলেছিল, "তোমায় খুব ভালোবাসি দীপক...তোমার ভেতরে থাকা এই কবি মানুষটিকে...কোনোদিন টাকা বা অন্য কিছুর জন্যই ছেড়ে যাব না...কথা দিলাম...বাড়ির বাবা মায়ের চাপেও এই সিদ্ধান্ত ভাঙবে না...আমি খুব স্ট্রং...।"
”
লিখেছেন:
সুদর্শন আজাদ

একটা শোরগোল...ঘন থকথকে...বাতাসে পচা গন্ধ ভেসে আসছে...যেন অনেকগুলো লাশের নিঃস্বাস বাতাসে মিশে গেছে...মাছির ভনভন...একটা বাজার...যথার্থই...কেনা বেচা... বেচা কেনা...মরা হাতি লাখ টাকা...
বাজারের একটি বন্ধ দোকানের সামনে সকাল সকাল ভীড় জমেছে...মাছির ভনভন...দোকানের সামনের বারান্দায় কেউ একটা বস্তা ফেলে রেখে গিয়েছে। কিছু একটা আছে ভেতরে রক্তমাখা...সম্ভবত লাশ...এলাকার নেতা রমেনবাবুর প্রাসাদ বাজারের কাছেই...এলেন। বললেন, "লাশ তোলার ব্যবস্থা করছি।" তারপরে ব্যস্ত হয়ে থানায় ফোন লাগালেন...
#
কাকলির বিয়ে হয়েয়েছিল প্রোমোটার রাজেশের সাথে। বিরাট ধুমধাম হয়েছিল। কাকলির বাবা বেশ টাকাওয়ালা পাত্রই খুঁজেছেন। মেয়ে সুখি হবে। বিয়ের পর কাকলি দেখল রাজেশের বিয়ে না করে রাখা একাধিক বউ। এরই সাথে বোনাস পেল দৈনন্দিনের অকথ্য অত্যাচার। বিয়ের দিন রাজেশ বলেছিল যে কাকলিই তার জীবনের একমাত্র ভালোবাসা, আর কাউকে সে চায় না। অন্য কারও জন্য সে কাকলির বিশ্বাস কখনও ভাঙবে না। বিয়ের পরের রাজেশের রূপ দেখে কাকলির মনে হল এ শুধু বিশ্বাসঘাতকতা নয়, এ এক পরিকল্পিত খুন...যদিও এরপরেও বাকি ছিল কিছু। এলাকার একটা বড় জমি হাত করতে এলাকার নেতা রমেনবাবুকে হাত করার জন্য কাকলিকে বাধ্য করল তার সাথে শু'তে...
এর চেয়েও ঘৃণ্য পদ্ধতি রাজেশের মত মানুষদের জানা আছে... যার কিছু নমুনা আমরা খুঁজে পাই সংবাদপত্র থেকে। আর কিছু পদ্ধতি অগোচরে থেকে যায়...আমাদের অজানা থেকে যায়...
#
দীপক তখন কবিতা লিখত। গভীর চোখ দুনিয়া দেখত...স্বপ্ন দেখত...। কবিতা মনের খোরাক...সে তাই তো জানত। মন মরে যায় তাও জানত সে। আর ভালো করেই জানত মনের খুন হলে মানুষ পাগল হয়ে যায়। প্রেমকে বুঝতে চাইত। কিন্তু কোনো মেয়েকে সহজে জীবনে প্রবেশ করতে দেয়নি। সে বুঝত দুনিয়া বড় জটিল। এখানে ভালো মনের চেয়ে টাকার দামই বেশি। কিন্তু কাকলি বলেছিল, "তোমায় খুব ভালোবাসি দীপক...তোমার ভেতরে থাকা এই কবি মানুষটিকে...কোনোদিন টাকা বা অন্য কিছুর জন্যই ছেড়ে যাব না...কথা দিলাম...বাড়ির বাবা মায়ের চাপেও এই সিদ্ধান্ত ভাঙবে না...আমি খুব স্ট্রং...।" দীপক যেন এক দেবীর খোঁজ পেয়েছিল। কাকলিকে মায়ের মতই বিশ্বাস করেছিল। যেন তার মনের পাখির কলকাকলি শরীর নিয়ে তার সামনে এসেছে। কাকলি যেন তার মায়ের মতই সৎ। মা যেমন অন্য কারো হয় না, অন্য কাউকে যেমন মা ভাবা যায় না, কাকলিও অন্য কারও হাত ধরবে না তাকে খুন করে। কাকলিকে ছাড়া সে যেমন অন্য কাউকে তার দেবী ভাবতে পারবে না, কাকলিও তাকে ছাড়া আর কাউকে কল্পনাতেও তার সবকিছু ভাববে না।
কাকলি কথা রাখেনি। দীপকের চাকরি হল না। কাকলিও বিয়ে করে নিল প্রোমোটার রাজেশকে। শুধু বলেছিল, "ভালবাসায় কিছু হয় না! টাকা দরকার!" সেদিন সে খুন হয়ে গিয়েছিল প্রোমোটার রাজেশের টাকার কাছে...
দীপক আজও অন্য কাউকে আর তার জীবনসঙ্গিনী ভাবতে পারে না। কল্পনাতেও না। অথচ যাকে সে মায়ের মত বিশ্বাস করল সে-ই কাকলি রাজেশের জন্য নিজের শরীর-মন উজার করে সমর্পণ করল...
দীপক আর কবিতা লেখে না! এরপর আর কবিতা লেখা যায় না...!