মিঠাইওয়ালা || কি. বা. জগন্নাথন || CHAPTER 14 || প্রশ্ন উত্তর || মাধ্যমিক বাংলা দ্বিতীয় ভাষা || সাহিত্য সম্ভার || WBBSE
প্রশ্ন: ১)
>> "এতক্ষণে তার জ্ঞানোদয় হয়।"--- কার জ্ঞানোদয় হয়? তার এই পরিবর্তনের কারণ পাঠ্য অনুসারে ব্যাখ্যা কর।
>> "তার গায়ে কোন আঘাত লাগেনি সত্য, কিন্তু গুরুতর আঘাত লেগেছে তার মনে।"--- তার মনের আঘাত কিভাবে তার মধ্যে পরিবর্তন এনে দিল পাঠ্য অনুসারে লেখ।
উত্তর:
>> কি. বা. জগন্নাথন-এর লেখা মিঠাইওয়ালা গল্পের প্রধান চরিত্র স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী মিঠাইওয়ালা মুনিস্বামীর রাগ সপ্তমে ওঠে যখন তার ব্যবসার পাত্র থেকে তার সন্তান মিঠাই তুলে খাওয়া শুরু করে। সে কষিয়ে তার সন্তানের গালে চড় দেয়। কিন্তু পরে সে তার ভুল বুঝতে পারে।
মুনিস্বামীর ছোট মিঠাই ব্যবসায়ী। সে স্কুলের ছেলেদের মধ্যে মিঠাই বিক্রি করতো। স্কুল একদিন বন্ধ থাকলেই তার ব্যবসা হতো না। ফলে ঘর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়তো। তারপর ছিল প্রতিযোগিতা। সামান্য মিঠাই ব্যবসাতেও অন্যান্যদের সাথে প্রতিযোগিতায় বাজার ধরার তাগিদে তাকে মিঠাইয়ের সাথে আরও নানা পণ্য রাখতে হয়।
গরমের ছুটি পড়ে যায় স্কুলে। মুনিস্বামীকে পেট চালানোর তাগিদে তীব্র গরম উপেক্ষা করে ব্যবসার জন্য বাড়ি বাড়ি বেরোতে হয়। দীর্ঘ ছুটির পর যেদিন স্কুল খোলে সেদিন প্রভুর নাম নিয়ে মুনিস্বামী তার মিঠাইয়ের ঝুরি সাজিয়ে ব্যবসায় যাবার মুহুর্তে তার দুই বছরের শিশুসন্তান একটি মিঠাই তুলে নিয়ে খেতে শুরু করে। মুনিস্বামী ক্রোধে জ্ঞান শূন্য হয়ে তার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। শিশুর এই স্বভাব তার কাছে সেই মুহূর্তে অলুক্ষণে মনে হয়। এবং এই স্বভাবকে প্রশ্রয় দিতে নেই তাই শাসন করাও জরুরি।
কিন্তু রাগ পড়ে গেলে সে বুঝতে পারে যে হাজার হোক শিশুটি তার নিজেরই সন্তান। ছোট অবুঝ একটি শিশু মাত্র সে। এত এত ছেলেদের সে মিঠাই খাওয়ায় অথচ নিজের সন্তানকে খাওয়ার সময় সে টাকাপয়সা, ব্যবসার হিসেব করছে। সে বোঝে এই আচরণ অমানবিক।
মুনিস্বামীর মনের মধ্যে এই আলোড়নের সময় হঠাৎই সে পায়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। আর সব মিঠাই নর্দমায় পড়ে যায়। পায়ে হোঁচট লাগলেও তার আসল আঘাত লাগে মনে। মুনিস্বামী সরল মনের। ঈশ্বরে বিশ্বাসী। সে বুঝতে পারে ভগবান তাকে তার অপরাধের শাস্তি দিল এইভাবে। কারণ শিশু পবিত্র। তার মধ্যে ঈশ্বর বাস করে। তার জ্ঞানোদয় হয়। সে বুঝতে পারে তার মধ্যে এখনও মনুষ্যত্ব আছে। তার অন্তর থেকে পিতৃস্নেহ মরে যায়নি।